Recents in Beach

জলের জীবন_আয়শা আহমেদ

জলের জীবন
_আয়শা আহমেদ
.
আমাকে মনে পড়ে দাদাই?
মনে পড়ে, আমায় শুকতারা দেখাতে ঘুমজাগা সেইসব ভোর?
স্কুলপালানো অবাধ্য দুপুর,
বাইকে,চেনা-অচেনা মেঠোপথ ধরে হারাতে হারাতে-
ধুলিস্নানের সেইসব বিকেল;মনে পড়ে?
আমায় আজকাল ওসব কিছুই আর নাড়া দেয় না।
আমায় শুধু পোড়াতে থাকে
একটা শ্রাবণসন্ধ্যা, একটা কবিতার খাতা আর নীরু বৌদি!
কবিতায় মুড়ে, এতগুলো কান্না
আমায় কেন শিখিয়ে গেলি রে দাদাই?
সেইযে,এক দশক পুরোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
আমার কোমল হাতে তুলে দিয়ে গেলি তোর আজন্ম কান্না, জলেদের শব্দরূপ,
আমি তখনো বুঝিনি রে দাদাই!
আমি বুঝিনি
তোর দীর্ঘশ্বাসের ক্লান্তি, আঁখিবাওয়া ঝর্ণার উৎপত্তিবিন্দু।
আমি কবিতা বুঝিনি!
আমি তখনো বুঝিনি-
কতোখানি কান্না জমালে,মানুষের বুকেও নদী বয়,
কতোখনি দহনে, মানুষের নিঃশ্বাসে পাওয়া যায় মৃত্যু মৃত্যু গন্ধ!
যেমনটা বোঝেনি নীরু বৌদি!
অথচ দ্যাখ দাদাই,
এতগুলো শ্রাবণ গ্যালো,এতগুলো বর্ষা নামলো,
শুধু নীরু বৌদির চোখেই জল ছুঁলো না!
নীরু বৌদিরা, ভালোবাসারা, যেন এক অদ্ভুত কচুপাতার দেয়াল;
আমাদের বৃষ্টি ওদের ছোঁয়ই না!
জানিস দাদাই?
এই এতগুলো শ্রাবণ পেরিয়ে এসে, আমিও আজকাল কবিতা বুঝি,
রক্তজবার মতো লাল চোখ মেলে, আমিও জেগে থাকি প্রতিটি নির্ঘুম রাত।
চেয়ে থাকি সন্ধ্যাতারা থেকে শুকতারা অবধি,
আমার চোখ লাগে না, আমার হিসেব মেলে না!
অবিকল তোর কান্না চোখে নিয়ে,
আমৃত্যু জেগে জেগে আমি খুঁজে ফিরি উত্তর-
“কতগুলো বর্ষা পেরুলে, ভালোবাসার বুকেও জন্মে কদম কুঁড়ির ঘ্রাণ,
কতগুলো মৃত্যু পেরুলে, ভাঙে মানুষের মিথ্যে অভিমান!”
অথচ আমার জানা হয়না,আমাদের জানা হয়না-
ভালোবাসা এক আমৃত্যু মোড়া কচুপাতার কাফন,
আমরা বয়ে বেড়াই জনমভর।
অথচ জলেদের প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ!
আর আমরা কেবলই জলের জীবন নিয়ে জন্মাই,
আমরা কেবলই জলের মরন নিয়ে জন্মাই!

Post a Comment

0 Comments